কৃষ্ণনগরের তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র লোকসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিমান ভাড়ার উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছেন। অভিবাসী শ্রমিক ও সাধারণ নাগরিকদের অত্যাধিক বিমানভাড়ার থেকে রক্ষা করতে তিনি ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (DGCA)-র হস্তক্ষেপ দাবী করেন। কেরালার বিধায়ক শফি পরাম্বিলের আনা আন্তর্জাতিক বিমান ভাড়ার নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাবকে সমর্থন করে মৈত্র জানান যে অভ্যন্তরীণ বিমান পরিষেবাতেও একই ধরনের সমস্যা রয়েছে।
তিনি বলেন, এই সমস্যা শুরু হয়েছিল ১৯৯৪ সালে, যখন এয়ার কর্পোরেশনস অ্যাক্ট বাতিল করা হয় এবং বিমান সংস্থাগুলিকে "যুক্তিসঙ্গত ভাড়া" নির্ধারণের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে, নিয়ন্ত্রণের অভাবে উৎসবের সময় ও জরুরি পরিস্থিতিতে চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগে বিমান সংস্থাগুলি অত্যধিক ভাড়া আদায় করছে।
মৈত্র উল্লেখ করেন যে ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিমান ভাড়া ৪৩% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এশিয়ায় ভিয়েতনামের পর দ্বিতীয় সর্বাধিক। তিনি জানান যে উৎসবের সময় বা জরুরি পরিস্থিতিতে ভাড়ার দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, যে টিকিটের অগ্রিম বুকিং ভাড়া ₹১৯,০০০ ছিল, সেটি জরুরি অবস্থায় ₹৭৭,০০০ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাজারের আধিপত্য ও প্রতিযোগিতার অভাব
ভারতীয় বিমান পরিষেবার বাজারে প্রায় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ রয়েছে দুটি প্রধান সংস্থার হাতে। ইন্ডিগো, যার বাজারের শেয়ার প্রায় ৬০%, এবং এয়ার ইন্ডিয়া গ্রুপ (এয়ার ইন্ডিয়া, ভিস্তারা, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস), যারা ২৫-৩০% বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। প্রায় ৯০% বাজার এই দুটি গ্রুপের দখলে, যা প্রতিযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং মূল্যবৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এই সমস্যার সমাধানের জন্য সাংসদ মহুয়া মৈত্র DGCA-কে উৎসবের সময় এবং জরুরি পরিস্থিতিতে বিমান ভাড়ার উপর নির্দিষ্ট সীমা আরোপের প্রস্তাব দেন। তার অন্যান্য প্রস্তাবগুলির মধ্যে রয়েছে এছাড়া বিশেষত চিকিৎসার জরুরি পরিস্থিতি বা পারিবারিক কারণে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নাগরিকদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করার আবেদন জানান ।
আন্তর্জাতিক সংযোগ ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ
কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ অভিযোগ করেন যে কলকাতার সঙ্গে যথেষ্ট আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। তিনি ইউরোপের সঙ্গে সরাসরি উড়ান চালুর দাবি করেন, যাতে উপসাগরীয় দেশগুলির মাধ্যমে ঘুরপথে যেতে না হয়। বাগডোগরা বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তাবও দেন তিনি, যাতে ভুটান, নেপাল ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সহজ যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। এছাড়াও, কুচবিহার বিমানবন্দরের সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করার আবেদন জানান মহুয়া।
মৈত্রর দাবি অনুযায়ী, উৎসবের সময় বা জরুরি পরিস্থিতিতে ভাড়া বৃদ্ধির মতো সমস্যার সমাধানে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। তার বক্তব্য সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ করে সাড়া ফেলেছে, যেখানে ভাড়ার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি যাত্রীদের উপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে।