কৃষ্ণনগরের জলঙ্গী নদীর উপর দিয়ে চলে গেছে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক যার সংযোজক হিসেবে তৈরি হয়েছিল দ্বিতীয় সড়ক ব্রিজ যা চালু হয়েছে বেশ কয়েক মাস, এখন সেই ব্রিজের উপর দিয়ে হু হু করে ছুটছে যানবাহন কিন্তু ব্রিজের নিচে নদীর কি অবস্থা তা আজ ভদ্র জনের অগোচর। স্থানীয় নদীজীবী মানুষজনের বিক্ষোভের জেরে আজ জলঙ্গী নদীর ভয়াবহ অবস্থার কথা প্রকাশ পেল জনসমক্ষে। আর তাই নিয়ে জাতীয় সড়কের অফিসে ২১শে জুন, শুক্রবার লিখিত অভিযোগ জমা করার পাশাপাশি বিক্ষোভ দেখালেন নদী তীরবর্তী জনপদের সাধারণ মানুষ ও মৎস্যজীবীরা।
ব্রিজ তৈরির সময় প্রত্যেকবারই মাটি এবং কংক্রিটের স্ল্যাব দিয়ে বুজিয়ে ফেলা হয় নদী, তারপর যদিও সেসব সরিয়ে নদীর বহমানতা ফিরিয়ে দেওয়াই নিয়ম কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় কাজ ফুরোলেই অদৃশ্য হয়ে যায় ব্রিজ তৈরির ঠিকাদারেরা। আধিকারিকদের উদাসীনতায় নদীপথ রোধ করা সেই মাটির ঢিবি গুলি স্থায়ী হয়ে যায় যার উপর গজিয়ে ওঠে গাছপালা, তৈরি হয় বাঁধাল। নদী বক্ষে আটকে যায় জেলে নৌকা থেকে শুরু করে অন্যান্য জলজ প্রাণী উদ্ভিদ।
কৃষ্ণনগরে জলঙ্গী নদীর বর্তমান ব্রিজের সংখ্যা মোট চারটি , পুরানো ব্রিজ গুলি নির্মাণের সময় হয়তো একটু সচেতনভাবে নদীর গতির কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু পরবর্তী ব্রিজ গুলি নির্মাণের সময় কেন এরকম অসচেতনতা ও অসংবেদনশীলতা প্রকাশ পেল তাই নিয়ে এবারে উঠেছে প্রশ্ন । মূলত জলঙ্গী নদীর ওপর চতুর্থ ব্রিজ নির্মাণের সময় যেন আগের সব দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকে ছাপিয়ে গিয়েছে এবারের ব্রিজ নির্মাণের কারিগরেরা এমনটাই অভিযোগ সাধারণ মানুষের। চতুর্থ ব্রিজ নির্মাণের পর দৃশ্যত নালায় পরিণত হয়েছে জলঙ্গী নদী। একেই দীর্ঘদিনের সংস্কারের অভাব, কচুরিপানার জটাজাল, তার উপর যথেচ্ছভাবে এই ব্রিজ নির্মাণ, নদীকে ইচ্ছেমত বুজিয়ে দেওয়ায় পর শেষমেষ জলঙ্গীকে আর মৃতপ্রায়ও বলা যাচ্ছে না। চতুর্থ ব্রিজ নির্মাণের সাথে সাথেই তবে কি শেষ হলো জলঙ্গীর জীবন? - উঠেছে সেই প্রশ্নও।
এদিন স্থানীয় নদীজীবী জনগণ ও 'জলঙ্গি নদী সমাজ' নামক প্রকৃতিপ্রেমী সংগঠনের চাপে পড়ে সরেজমিনে নদীর পাড়ে পৌঁছেছিলেন প্রজেক্ট ডিরেক্টর কুমার সিং এবং কার্যনির্বাহী সেই ঠিকাদার। প্রথমে ঠিকাদারি সংস্থা KCC Buildcon Pvt. Ltd. এ বিষয়ে কথা বলতে না চাইলেও পরে ঠিকাদার সাহেব ব্রিজের নিচে নদীর অবস্থা পরিদর্শনে আসেন। তখনই তাকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। প্রথমে সাহেব -ব্রিজ নির্মাণের পর নদীর যে প্রভুত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে কথা অস্বীকার করলেও পরে একরকম বাধ্য হয়েই নৌকো নিয়ে স্থানীয় মৎস্যজীবী কমল হালদার, পরিবেশকর্মী অমিতাভ সেনগুপ্তের সাথে নদীতে নামেন পর্যবেক্ষণে। ব্রিজের নিচ দিয়ে নৌকো কিছু দূর যাওয়ার পরই তীরবর্তী মানুষের চক্ষু চড়ক গাছ! ঐ মৎস্যজীবী যখন বৈঠা দিয়ে নদীর নাব্যতা মেপে দেখান তখন দেখা যায় কোথাও হাটু জল,কোথাও কোমর জল রয়েছে জলঙ্গীর মাঝ-নদীতে।
জলের তলায় বড় বড় সিমেন্টের স্ল্যাব ফেলেই বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে নদী বক্ষ এমনটাই দাবী নদী তীরবর্তী মৎস্যজীবী জীবন হালদারের। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এও জানা যায় যে নদী বক্ষের নাব্যতা আজ যেখানে হাটু জলে ঠেকেছে সেখানেই একদা দুই-তিন মানুষ ডুবন জল ছিল। নদীতে যে বাঁধাল সৃষ্টি হয়েছে তাতে নদীতে পলি পড়ে তা সমগ্র নদীকে গ্রাস করবে বলেও অনুমান পরিবেশ কর্মী অমিতাভ সেনগুপ্তের। শম্ভুনগর এলাকায় চর জাগছে বলেও দাবী করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সমগ্র বিষয় উন্মোচিত হওয়ার পরও ঐ ঠিকাদার মাটি কেটে ও আবর্জনা সরিয়ে ব্রিজ পার্শ্ববর্তী নদী বক্ষের নাব্যতা পুনরুদ্ধার করার স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেওয়া থেকে বিরত থাকেন বরং অজুহাত দেন যে বর্ষায় জল বাড়ছে বলে মাটি কাটা সম্ভব নয়। তবে যদিও শেষমেশ প্রজেক্ট ডিরেক্টর কুমার সিং তার কাছ থেকে এই প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেন। প্রজেক্ট ডিরেক্টরের এ হেন সহযোগিতায় আশ্বস্ত হন বিক্ষোভকারীরা।
ঠিকাদারি সংস্থা থেকে ক্যামেরায় অন রেকর্ড প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যে আগামীকাল ২৪শে জুন সোমবার ব্রিজ পার্শ্ববর্তী নদী বক্ষ পরিষ্কার করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ঘোষণা হবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি কতটা পূরণ হয় তা দেখে শুনে প্রয়োজনমতো জোর করে তাদের দাবী আদায় করতে প্রস্তুত থাকবে নদী তীরবর্তী বাহাদুরপুর, শম্ভু নগর, গেট রোড, নিচের পাড়া ইত্যাদি জনপদের মানুষ এবং পরিবেশ কর্মীরা।